শাহজাহান চৌধুরী শাহীন,কক্সবাজার ::
কক্সবাজার শহরের কলাতলী হতে উখিয়া উপজেলার মনখালী পর্যন্ত এলাকায় সৈকত ঘেষে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক চিংড়ি হ্যাচারী। এসব হ্যাচারী থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার বিভিন্ন ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। এতে করে সাগরের পানি দুষিত হয়ে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক প্রাণী সহ উপকূলে বসবাসকারী ২০ হাজারের অধিক পরিবার। দুষিত পানির কারণে সামুদ্রিক প্রাণি কাচিম ও ডলফিন চরে এসে মারা পড়ছে।
সমুদ্র উপকুলীয় এলাকা ইনানী ও সোনার পাড়া হ্যাচারী জোনে বসবাসকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে উখিয়ার সোনারপাড়া ইনানী পর্যন্ত এলাকাজুড়ে ছোট বড় অর্ধশতাধিক মৎস্য পোনা হ্যাচারী রয়েছে। এসব হ্যাচারী গুলো থেকে নির্গত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে করে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ লিটার দুষিত পানি সাগরে পড়ছে।
দুষিত পানি সাগরে ছড়াচ্ছে এমন হ্যাচারীর মধ্যে রয়েছে, কলাতলীর নিরিবিলি হ্যাচারী, সোনার পাড়ার সৌদিয়া হ্যাচারী, এস আলম হ্যাচারী, ডায়মন্ড হ্যাচারী, এস আর হ্যাচারী, মর্ডান হ্যাচারী, এস কে হ্যাচারী, মক্কা হ্যাচারী, গ্রামীণ হ্যাচারী, বেঙ্গল বে হ্যাচারী, রেড়িয়ান হ্যাচারী, আল আসরাফ হ্যাচারী, বৈশালী হ্যাচারী, প্যাসিফিক হ্যাচারী, বোরাক হ্যাচারী , সী কুইন হ্যাচারী, সোনালী হ্যাচারী , ইনানী হ্যাচারী, সুপার হ্যাচারী, এ আরসি হ্যাচারী ও সততা হ্যাচার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের সাথে দুটি করে বড় পাইপ সংযোগ করা হয়েছে। এই পাইপগুলোর মাধ্যমে হ্যাচারী গুলোতে সংগ্রহ করা হয় সাগরের লবণাক্ত পানি। হ্যাচারী গুলোর উৎপাদিত চিংড়ি পোনা সংরক্ষন করা হয় সমুদ্রের এই নোনা পানি দিয়ে।
এইসব হ্যাচারী হতে নির্গত বজ্যগুলো ওইসব বড়বড় পাইপ লাইন দিয়েই বঙ্গোপসাগরে ফেলানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোরাক, এস আলম , সৌদিয়া হ্যাচারীর একাধিক কর্মচারী সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন একেকটি হ্যাচারীতে ৩’শ থেকে ৪’শ টন নোনা পানি সংগ্রহ করা হয়। আর বিভিন্ন রাসায়নিক জাতীয় ক্যামিকেল মিশানোর এই পানি আবার দিনের শেষে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হয়। এ হিসেবে প্রতিদিন একটি হ্যাচারী থেকে ৪’শ টন বজ্য ও পানি সমুদ্রে ফেলা হলে ৪২ টি হ্যাচারী থেকে প্রতিদিন ১৬ হাজার ৮’শ টন বিষাক্ত পানি ফেলা হচ্ছে। এতে করে সমুদ্রে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সামুদ্রিক প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে পাশাপাশি বিষাক্ত পানি হ্যাচারী জোনের আশপাশ এলাকা মারাত্মক দুষনের সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দ আহাম্মদ বলেন, প্রতিদিন এভাবে বিপুল পরিমান বিষাক্ত পানি সাগরে পড়ায় সাগরের ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে পানিগুলো বিষাক্ত হয়ে গেছে। এছাড়া বিষাক্ত রাসায়নিক যুক্ত পানি সাগর ছাড়াও বিভিন্ন ভাবে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কারনে স্থানীয় জমিগুলোতে কোন চাষাবাদ হচ্ছেনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ২/৩ বছর আগেও এখানে নলকূপ থেকে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান সময়ে নলকূপ থেকে আর বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে না। নলকূপ গুলো পাওয়া যাচ্ছে লবনাক্ত আর দুষিত পানি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, যেসব হ্যাচারী সমুদ্র দুষিত হওয়ার মতো পানি ফেলা হচ্ছে ওই সব হ্যাচারীর মালিকদের ইতোপূর্বে কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও কেমিক্যাল যুক্ত পানি সমুদ্রে ফেলে থাকে অবশ্যই এইসব হ্যাচারীর বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাওয়া কথা স্বীকার করে বলেন, গত ২ এপ্রিল রোববার কক্সবাজার কলাতলি পয়েন্টে ১০ কেজি ওজনের একটি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। তবে কি কারণে মারা গেছে তা বুঝা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে বার্ধক্য জনিত রোগে ডলফিনটি মারা গেছে।
পাঠকের মতামত: